ত্বকের যত্নে আমরা সবাই কমবেশি ক্লিঞ্জিং করি। ক্লিঞ্জিংয়ের এর মাধ্যমে আমরা আমাদের ত্বকের উপরিভাগ ও লূমকুপের গভীরে জমে থাকা ময়লা,তেল,মৃত কোষগুলিকে পরিষ্কার করি। ফলে ব্রেক আউট, পিম্পল, একনি সহ নানা ধরনের সমস্যা থেকে আমাদের ত্বক রক্ষা পায়।
আর এই ক্লিঞ্জিংয়ের কাজে আমরা যে প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করি তাই মূলত ক্লিঞ্জার। ক্লিঞ্জার আমাদের ত্বকের সকল ইম্পিওরিটি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও দীপ্তি বাড়িয়ে তোলে।
কিন্তু অনেক সময় নিয়মিত ক্লিঞ্জার ব্যবহার করার পরেও আমাদের ত্বকের ইম্পিওরিটিগুলো দূর হয় না,বরং ত্বকে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা।
ডার্মাটোলজিস্ট বা বিউটিশিয়ানরা এর কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন সঠিক ক্লিঞ্জার দিয়ে সঠিক নিয়মে ক্লিঞ্জিং না করাকে। তাহলে চলুন আজকে আমরা জেনে নেই ত্বকের যত্নে ক্লিঞ্জার চুজ করা ও ক্লিঞ্জিংয়ের এর সঠিক উপায় সমন্ধে।
ক্লিঞ্জার বাছাই:
বাজারে নানা ধরনের ক্লিনজার রয়েছে। এই প্রতিটি ক্লিনজার-ই আমাদের স্কিন কনসার্ন গুলো বিবেচনায় নিয়ে এর চাহিদার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্লিনজার- ই কোন না কোন স্কিন উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।
তাই ত্বকের ধরণ অনুযায়ী কিভাবে নিজের জন্য সঠিক ক্লিনজারটি বেছে নিবো, তা ঠিক করার জন্য আগে এসব ক্লিনজার সম্বন্ধে পুরোপুরি জানতে হবে। চলুন আগে জেনে নিই কোন ক্লিনজার আমাদের ত্বকে কি কাজ করে –
১. ফোম ক্লিনজার:
এই ধরনের ক্লিনজার খুবই লাইটওয়েইট হয়। এটি মূলত ত্বকের অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা দূর করে। ওয়েলি স্কিনের মানুষদের জন্য এ ক্লিনজার আশীর্বাদ স্বরূপ। আপনার ত্বক যদি খুব বেশি রুক্ষ হয় তাহলে ফোমিং ক্লিনজার বর্জন করাই উত্তম, কারণ ফোমিং ক্লিনজার ড্রাই স্কিনকে আরো বেশি ড্রাই করে ফেলে।
২. জেল ক্লিনজার:
এ ধরনের ক্লিনজার দেখতে ট্রান্সপারেন্ট এবং থিক (thic) হয়। জেল ক্লিনজারে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ইনগ্রিডিয়েন্টস থাকে যা ত্বকের ময়লা এবং অতিরিক্ত তেল রিমুভ করে। এটি খুবই ডিপলি ক্লিন্স করে লোমকূপ গুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়। বিশেষ করে যাদের মুখে অতিরিক্ত ব্রণ বা পিম্পলের সমস্যা আছে তাদের জন্য এই ধরনের ক্লিনজার খুবই উপকারী। সুতরাং যাদের ত্বক একটু ওয়েলি তাদের জন্য জেল ক্লিনজার খুবই উপকারী। এছাড়া কম্বিনেশন স্কিন টাইপের জন্যও এটি খুব ভালো কাজে দেয়।
shop at waterlotus
৩. মিল্ক/লোশন ক্লিনজার:
এ ধরনের ক্লিনজার থিক (thic) এবং ক্রিমি (creamy) হয়। এতে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার ইনগ্রেডিয়েন্টস থাকে যা ত্বকের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব দূর করে। তাই যাদের ত্বক একটু রুক্ষ বা ড্রাই তাদের বেঁছে নিতে হবে মিল্ক বা লোশন ক্লিনজার। আমরা জানি যে যাদের স্কিন খুব বেশি ড্রাই তাদের বার বার মুখ ধুতে বারণ করা হয়, কারণ এতে করে আপনার ত্বকে উৎপাদিত প্রয়োজনীয় সেবাম দূর হয়ে ত্বককে আরো বেশি ড্রাই করে। মিল্ক বা লোশন ক্লিনজার ব্যবহারের সবচেয়ে মজার দিকটি হচ্ছে এটি ব্যবহারের পর পানি দিয়ে মুখ না ধুলেও চলে। ভালোভাবে ক্লিনজারটি মুখে মাসাজ করার পর কোনো ভেজা টাওয়েল বা টিসু দিয়ে মুখ পুরোপুরি মুছে নেওয়াই যথেষ্ট। তবে আপনার স্কিন টাইপ যদি বেশি ওয়েলি হয় তবে মিল্ক ক্লিনজার বা লোশন ক্লিনজার ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয় কারণ এদের কাজ ত্বককে আরো বেশি ময়েশ্চারাইজ করা।
৪. মাইসেলার ওয়াটার:
মাইসেলার ওয়াটারের সাথে আমাদের পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। মূলত মাইসেলার ওয়াটার, বিউটি ওয়াটার, ক্লিনজিং ওয়াটার এসব প্রোডাক্টের কাজ একই। এটি পানিজাতীয় তরল যাতে খুব ক্ষুদ্র আকারের ক্লিনজিং মলিকিউলস থাকে। এই মলিকিউল গুলি ডার্ট এবং অয়েলকে এট্রাক্ট করে। রুক্ষ বা সেনসিটিভ ত্বকের জন্যই খুবই উপকারী এই ক্লিনজারটি সকল প্রকার ত্বকেই ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রেও কটন প্যাড বা তুলায় সামান্য মাইসেলার ওয়াটার ভিজিয়ে নিয়ে পুরো মুখে ক্লিন করে নিলেই যথেষ্ট। পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নেই।
৫. ক্লিনজিং অয়েল:
ক্লিনজিং ওয়েলটি মূলত সব ধরনের ত্বকের কথা বিবেচনা করে তৈরি। যদি মনে করে থাকেন এটি শুধুমাত্র ড্রাই স্কিনের মানুষদের জন্যই উপকারী তাহলে আপনার ধারণা ভুল। এর মূল কাজ হলো স্কিনের মেকাপ এবং অন্যান্য ধুলো ময়লাকে গলিয়ে বের করে আনা। সব ধরনের স্কিনের মানুষজনই স্বাচ্ছন্দ্যে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। বিশেষ করে ডাবল ক্লিঞ্জিং এর প্রথম ধাপে মুখের ময়লা, ঘাম এবং মেকাপ রিমুভের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী ধাপে আপনার ত্বকের ধরণের সঙ্গে মানানসই ক্লিনজারটি দিয়ে মুখ ক্লিন্স করতে হবে।
৬. ক্লিনজিং ওয়াইপস (wipes):
এটি আসলে কোনো ক্লিনজার নয়। এই ওয়াইপস গুলোতে ময়েস্টেন্ড উপাদান ব্যবহার করা হয় যা ইন্সট্যান্ট ক্লিঞ্জ করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত বাসার বাইরে থাকলে বা হাতে একেবারেই সময় না থাকলে শর্টকাট পদ্ধতি হিসেবে ওয়াইপস ইউজ করা যেতে পারে। এটি ডিপলি ক্লিঞ্জ করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। শুধুমাত্র ইনিশিয়াল লেয়ারের ঘাম বা ধুলোবালি পরিষ্কারের কাজে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭.ক্লে ক্লিনজারঃ
এ ধরনের ক্লিনজারটি মূলত ওয়েলি ও কম্বিনেশন স্কিনের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। এটি ত্বকের উপরিভাগ ও লূমকুপের অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা দূর করে। কিন্তু এটি মেকাপ রিমুভের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।
৮.পাউডার ক্লিনজারঃ
পাউডার ধর্মী এই ক্লিনজারটি পানির সংস্পর্শে আসলে অনেকটা ক্রিম বা ফোমের রূপ ধারন করে। ডীপ ফেসিয়াল ক্লিনজিং ও মেকাপ রিমুভের জন্য এটি খুবি কার্যকরী। ওয়েলি, কম্বিনেশন ও সেনসিটিভ ত্বকের জন্যই খুবই উপকারী।
এছাড়াও বার সোপ ক্লিনজার,ক্লিনজিং বাম সহ আরো অনেক ক্লিনজার রয়েছে। বার সোপ ক্লিনজার ওয়েলি ও কম্বিনেশন স্কিনের জন্য এবং ক্লিনজিং বাম নরমাল ও ড্রাই স্কিনের জন্য ব্যবহার উপযোগী।
Shop With Water Lotus
skin cleanser
Cider Vinegar Clay Mask
এই প্রতিটি ক্লিনজার নির্দিষ্ট স্কিনের জন্য তৈরি হলেও অনেক সময় তা নির্দিষ্ট স্কিনের বাইরের জন্য তা তৈরি করা হয়।
সেইক্ষেত্রে ক্লিনজারটি বাছাই করার আগে এতে আপনার ত্বকের উপযোগী ইনগ্রিডিয়েন্টস আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। অর্থাৎ তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে দেখে নিন আপনার ক্লিঞ্জারে স্যালিসাইলিক এসিড, বেনজাইল-পার-অক্সাইড, ট্রি ট্রি অয়েল, ক্লে, গ্লাইকোলিক এসিড ইত্যাদি উপাদান আছে কিনা।
একইভাবে শুষ্ক ত্বকের ক্লিঞ্জারের ক্ষেত্রে গ্লিসারিন, হায়ালুরনিক এসিড, সিরামাইড, ইউরিয়া, ভিটামিন ই, ল্যাকটিক এসিড এবং সংবেদনশীল ত্বকের ক্লিঞ্জারের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা, নিয়াসিনামাইড, প্যানথেনল, কিউকাম্বার সিড অয়েল, উইচহেজেল, বিসাবলস ইত্যাদি উপাদানগুলি আছে কিনা তা ক্লিনজারটি ব্যবহারের পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিন।
তথ্যসূত্র ঃ https://www.paulaschoice-eu.com/which-cleanser-is-right-for-my-skintype