সানস্ক্রিন কি?

সানস্ক্রিন হচ্ছে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যা সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিকে শোষণ করে তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড রোদে সানবার্নের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করে থাকি। 

তবে শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালেই যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে অথবা বাসার বাইরে বের হলেই সানস্ক্রিন এপ্লাই করে বের হতে হবে, বিষয়টি এমন না। 

আপনার স্কিনটোন যেমনই হোক এবং ঘরে বা বাইরে যেখানেই থাকুন, দিনের বেলায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

এটি আপনার ডেইলি রুটিনের সর্বশেষ ধাপ হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি কিন্তু সান প্রটেকশন।

সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

১. সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকে প্রবেশ করে ত্বকের কোলাজেন তন্তুকে ধ্বংস করে ফেলে।

কোলাজেন আমাদের ত্বকের দৃঢ়তা এবং আকার বজায় রাখতে সাহায্য করে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এই কোলাজেন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের ত্বকের ইলাস্টিসিটি বা দৃঢ়তা নষ্ট হয়ে যায়।

ফলে ত্বকে বলিরেখা বা রিংকেল দেখা দেয়।

সানস্ক্রিন সূর্য থেকে আগত এই অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। ফলে ত্বক সুরক্ষিত থাকে।

ডার্মাটোলোজিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী ন্যূনতম 30 SPF (Sun Protection Factor) সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

২. এটি আপনার স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস করে।

৩. এটি আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা করে।

ত্বকের কোলাজেন স্তরকে সুরক্ষিত রেখে প্রিম্যাচিউর এজিং থেকে ত্বককে বাঁচিয়ে রাখে।

গবেষকদের মতামত অনুযায়ী, যাদের বয়স পঞ্চাশোর্ধ তাদের মধ্যে যারা ডেইলি স্কিন কেয়ার রুটিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেছেন তাদের তুলনায় যারা ব্যবহার করেননি তাদের ত্বকে বয়সের ছাপ বেশি প্রবল।

৪. এটি স্কিনটোনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে। নরমালি সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে বের হলে স্কিন ট্যানড হয়ে যায় বা সানবার্নের কারণে ত্বকে স্বাভাবিক টোন বদলে যায়। ত্বক কালচে হয়ে যায়।

মূলত সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের মেলানোসাইট কোষকে আক্রমণ করে। মেলানোসাইট আপনার ত্বকের বর্ণ নির্ধারণ করে। এই মেলানোসাইট এর পার্থ্যকের কারণেই আমরা মানুষের গায়ের রঙে ভিন্নতা দেখতে পাই।

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এই মেলানোসাইট কোষকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে অধিক পরিমাণে মেলানিন তৈরি হয় এবং হাইপার পিগমেন্টেশন এর সমস্যা দেখা দেয়।

৫. এছাড়াও সানস্ক্রিনের ব্যবহার ত্বককে ডার্ক স্পটস এবং পিগমেন্টেশন এর হাত থেকে রক্ষা করে। সানস্ক্রিন ছাড়াই বাইরে বের হলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ত্বকে প্রবেশ করার কারণে ডার্ক শকিনে ডার্ক স্পটস বা পিগমেন্টেশন দেখা দেয়।

৬. সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি আমাদের ত্বকের ইমিউন-প্রটেক্টিং সেল (immune protecting cell) এবং ফ্রি-র‍্যাডিকেলস (free-radicals) ধ্বংস করে ফেলে।

এই ইমিউন প্রোটেক্টিং সেল আমাদের ত্বককে সকল ধরনের স্কিন ডিজিজ এবং অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে। তাই এই সেলগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হলে স্কিন ক্যান্সার অথবা অন্যান্য স্কিন ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কিভাবে সানস্ক্রিন বাছাই করবেন

১)সানস্ক্রীণটি অবশ্যই ব্রড স্পেকট্রামের হতে হবে অর্থাৎ তাকে কার্যকরীভাবে আল্ট্রা ভায়োলেট ‘এ’ ও ‘বি’ উভয় ধরণের রশ্মিকে প্রতিহত করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

২)অতিরিক্ত কেমিক্যালের ক্ষতি থেকে বাঁচতে ৫০ এসপিএফ এর বেশী মাত্রার কোন সানস্ক্রীন ব্যবহার করবেন না।

৪)সানস্ক্রীন ক্রিমটি পানি নিরোধী হতে হবে(water proof),ঘাম নিরোধী হতে হবে(sweat proof),সহজে মুছে যাবে না(rub proof),ব্রণ তৈরী করবে না(non-comedogenic) এবং ত্বকের অার্দ্রতা(moisturizer) বজায় রাখবে।

সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম

১)মুখে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই বাম হাতে ২৪ ঘন্টার জন্য লাগিয়ে (প্যাচ টেস্ট) নিশ্চিত হয়ে নিবেন সানস্ক্রীনটি আপনার ত্বকে কোন সমস্যা সৃষ্টি করছে কিনা।

২)সূর্যের আলোতে যাওয়ার কমপক্ষে ৩০মি. পূর্বে সানস্ক্রীন ক্রিম লাগাবেন।

৩)সূর্যের আলোতে অবস্থানকাল বেশীক্ষণ হলে প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর সানস্ক্রিনটি ব্যবহার করবেন।